Home

আধুনিক পদ্ধতিতে মুরগির খামার করার নিয়ম

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি পরিবারই দেশি মুরগি পালন করে। দেশি মুরগি সকল গৃহপালিত মুরগির মধ্যে অন্যতম কারণ এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। বিদেশী মুরগির তুলনায় এদের উৎপাদন ক্ষমতা কম কিন্তু এদের চাহিদা অনেক বেশি। এরে খাবার কম খায় এবং গায়গা অনেক কম লাগে তাই এদের উৎপাদন খরচ ও অনেক কম। এদের মাংস এবং ডিমের দাম বিদেশি মুরগির চেয়ে বেশি থাকে। দেশী মুরগী প্রতি পালন করে বাড়তি আয় করতে পারে।

আমরা সবাই বলে থাকি দেশী মুরগির উৎপাদন কম কিন্তু আমরা দেশী মুরগি চাষে উন্নত ব্যবস্থা বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশী মুরগীর উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারি। সাম্প্রতিক বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশী মুরগি উৎপাদনের উন্নত কৌশল ও প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছে। তাদের থেকে পরামর্শ করে উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কৃষকরা গৃহপালিত মুরগি থেকে অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদন করে পারিবারিক পুষ্টি ও আয় বৃদ্ধি করতে পারে।

দেশি মোরগ-মুরগি আবদ্ধ ও ছেড়ে পালন করা যায়। তবে ছেড়ে পালন করলে বেশি লাভবান হওয়া যায় কারন মোরগ-মুরগি নিজের খাদ্য নিজে কুড়িয়ে খায়।এরা মুক্ত আলো বাতাস বিশেষ করে প্রচুর সূর্য কিরণে বেড়ে উঠে যা তাদের শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি করতে সাহায্য করে। এদের খাবারের জন্য তেমন কোন খরচ করতে হয় না। আপনি যদি দেশি মুরগি পালন করতে চান তাহলে আপনাকে ভালো মানের মোরগ, মুরগি নির্বাচন করতে হবে। তাই দেখে শুনে সুস্থ, সবল এবং সুস্থ মুরগি সংগ্রহ করা প্রয়োজন। ৪০০-৬০০ গ্রাম মুরগি দিয়ে শুরু করলে ভালো ফলাফল আশা করা যায়। কারণ সেই সময়ের পরে মোরগ-মুরগি গুলি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং যত্নের পরে মুরগির গড় ওজন ২ মাস পরে ২ কেজির বেশি হয়ে থাকে। এই জন্য আপনারা ভালোভাবে দেশি মুরগি পালন করে লাভোবান হতে পারেন।

দেশি মুরগি পালনের ঘরঃ

দেশি মুরগি পালনের ঘর হতে হবে খোলামেলা। প্রতি ১০-১৫টি দেশি মুরগির জন্য আপনি নিম্নে দেওয়া পদ্ধিত মত এইরকম একটি করে ঘর তৈরী করতে পারেন। মুরগি ঘরের মাপ হল, ১.৫ মিটার (৫ ফুট) লম্বা, ১.২ মিটার (৪ ফুট) চওড়া এবং ১ মিটার (৩.৫ ফুট) উচ্চতা।

ঘরের বেড়া বাঁশ বা কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। এছাড়া মাটির দেয়াল দিয়েও তৈরি করা যাবে। বেড়া বা দেওয়ালে আলো বাতাস চলাচলের জন্য ছিদ্র রাখতে হবে। ঘরের চাল খড়, টিন বা বাঁশের সাথে পলিথিন ব্যবহার করে তৈরি করতে পারেন।

দেশি মুরগি ঘরের মাপঃ

বয়স প্রতিটির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ (বর্গমিটার)
মাস লিটার পদ্ধতি খাঁচা পদ্ধতি মাচা পদ্ধতি
০-১ মাস ০.০৫ ০.০২ ০.০২
১-২ মাস ০.১৪ ০.০৩ ০.০৩
২-৩ মাস ০.১৯ ০.০৫ ০.০৫
৩-৪ মাস ০.২৩ ০.০৫ ০.১০
এডাল মুরগি ০.২৮ ০.০৭ ০.১৯

খাঁচায় বা আবদ্ধ অবস্থায় দেশি মুরগি পালনঃ

খাঁচায় বা আবদ্ধ অবস্থায় দেশি মুরগি পালন করাকে আধুনিক পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি বলে। খাচায় দেশি মুরগি পালন করলে মুরগির মৃত্যুর হার কমে যায়, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা ও রোগ নির্নয় করা সহজ হয়। মুক্ত ভাবে মুরগি পালন করলে বেশি মুরগি পালন করা যায় না অতপর মুরগির রোগ বালইও বেশি দেখা যায় তাই আবদ্ধ ভাবে মুরগি পালন করা ভালো। এই মুরগির জন্য আধুনিক বাসস্থান করা হয়। এখানে সব সময় খাবার ও পানি থাকে এবং অতিরিক্ত গরম এবং ঠান্ডা নিয়ন্ত্রন করা হয় যাতে মুরগি গুলোর কোন ধরনের সমস্যা না হয়। এই মুরগিদের উন্নত মানের খাদ্য খাওয়ানো হয় এতে মুরগির গ্রোথ ভালো হয় এবং মুরগির ওজন ও বেশি হয়।

বাচ্চা ফুটার পর বাচ্চা ও মুরগির পরিচর্যঃ

মা মুরগীকে গরম কালে ৭ থেকে ১০ দিন এবং শীতকালে ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য শিশুর সাথে থাকতে দেওয়া উচিত কারণ এই কয়দিন মুরগী ​​নিজেই বাচ্চাকে উম দেবে। এর জন্য কৃত্রিম ব্রুডিংয়ের প্রয়োজন হবে না। এ সময় মা মুরগিকে ভালো খাবার খাওয়ানো উচিত এবং মুরগির বাচ্চাকে ও ছোট দানার খাবার আলাদা দেওয়া উচিৎ। কারণ বাচ্চা গুলি তার মায়ের সাথে খেতে শিখবে।

কিছুদিন পর মুরগিকে বাচ্চা থেকে আলাদা করা উচিত। এই অবস্থায় বাচ্চাকে কিছুদিন কৃত্রিম ব্রুডিং এবং খাবার দেওয়া উচিত। এরপর থেকে বাচ্চা লালন -পালন পদ্ধতির মতো সবকিছুই অনুসরণ করতে হবে। এই সময়ে মা মুরগিকে দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন দিতে হবে যাতে আবার দ্রুত ডিম দেই। বাচ্চাকে এমনভাবে আলাদা করতে হবে যেন তার মা মুরগি দেখতে না পারে, এমনকি শিশুর কিচিরমিচির শব্দ যেন মা মুরগি শুনতে না পায়। যদি মা বা বাচ্চার ডাকা ডাকিতে কেউ শুনতে পারে তাহলে তারা কোন খাবার বা পানি কিছুই খাবে না

দেশি মুরগি পালন প্রশিক্ষণঃ

পোল্ট্রি ফার্ম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে দেশি মুরগি পালন প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক বেকার যুবক একটি স্বাধীন কর্ম সংস্থান করেছে। আপনি দেশি মুরগি পালন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি মুরগির ফার্ম করতে পারে। এতে আপনি আনেক লাভবান হবেন। যেখান থেকে আপনি প্রশিক্ষণ নিবেন সে প্রতিষ্টান গুলি হল, ১) উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ২) বাংলাদেশ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে আপনি এই প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে যে সকল বিষয়ে স্বল্প মেয়াদি পোল্ট্রি ফার্ম প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে-

লেয়ার মুরগি পালন প্রশিক্ষণ
ব্রয়লার মুরগি পালন প্রশিক্ষণ
দেশী মুরগি পালন প্রশিক্ষণ
সোনালী বা ককরের মুরগি পালন প্রশিক্ষণ
হাঁস পালন প্রশিক্ষণ
কবুতর পালন প্রশিক্ষণ
কোয়েল পালন প্রশিক্ষণ
তিতির পালন প্রশিক্ষণ
টার্কি মুরগি পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ
পোল্ট্রি ফার্ম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো থেকে সহজে একটি প্রশিক্ষণ নিয়ে খামার শুরু করা উচিৎ।

দেশি মুরগি পালন ও চিকিৎসা
দেশি মুরগি পালন ও চিকিৎসা

গৃহপালিত মুরগি পালন সহজ এবং রোগ তুলনামূলকভাবে অনেক কম কিন্তু সম্পূর্ণ রোগমুক্ত নয়। মুরগি পালনের জন্য মুরগিকে নিয়মিত টিকা দিতে হবে। ফার্মে রোগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিত্সা প্রদান করা উচিত। দেশি মুরগিদের সাধারণত রানীক্ষেত, গামরোরো, মাইকোপ্লাজমোসিস, কক্সিডিওসিস ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে। আপনার যদি বাণিজ্যিক মুরগির খামার থাকে তবে আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শে ঔষুধ খেতে হবে। পারিবারিক বা ছোট খামারের জন্য উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের পরামর্শও নেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।

দেশি মুরগির ভ্যাকসিন বা টিকাঃ

অনেকেই মনে করে দেশি রোগ কম তাই মুরগিকে কোন ভ্যাকসিন দেয়ার প্রয়োজন হয়। তবে বানিজ্যিক ভাবে দেশি মুরগিকে বিভিন্ন ভাইরাল রোগ থেকে মুক্ত রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল নিয়ম মেনে টিকা প্রদান করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *